5169
Loading ...

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

তদন্তে গঠিত ১০ সদস্যের কমিটি, ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনরা

তুর্য দাস (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি): সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের স্টোরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ও ওষুধ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বুধবার বিকেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন এবং আউটডোরে চিকিৎসা নেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু রোগীদের অধিকাংশকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকারি অর্থে সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণ ওষুধ স্টোরে মজুদ অবস্থায় পড়ে থেকে একে একে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।

ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক ও ব্যথানাশকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশন ও ট্যাবলেট। কিছু ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে, আবার কিছু ওষুধ ২০২৩ সালের আগস্টেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে।

হাসপাতালের এনেসথেসিয়া টেকনিশিয়ান রাজন দে বর্তমানে স্টোর কিপারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি এ কাজ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টোর ব্যবস্থাপনায় অন্তত সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকলেও দায়িত্ব বিভাজন ও সমন্বয়ের অভাবে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে যোগ দেওয়া স্টোর কিপার রুপম কুমার দাস জানিয়েছেন, তাকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে স্টোরের কাজ অন্যরা সামলাচ্ছেন।

ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বণিক ঢাকা অবস্থান করায় দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ জানান, ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে সাংবাদিকরা যখন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ছবি তুলছিলেন, তখন তিনি কার অনুমতিতে স্টোর খোলা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ-হাসপাতাল ভর্তি হয়েও অধিকাংশ ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে, অথচ সরকারি ওষুধ স্টোরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পৌর শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা হোসনে খা জানান, “হাসপাতালে ভর্তি হয়েও আমাকে তিনশ’ টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনতে হয়েছে।”

সদর উপজেলার নীলপুর গ্রামের সাফতেরা বেগম বলেন, “ভর্তি হয়ে হাসপাতালে শুধু ক্যানুলা আর প্যারাসিটামল পেয়েছি, কিন্তু বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।”

স্থানীয়রা মনে করছেন, ওষুধ সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় অবহেলা, অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এই বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে। তাঁরা পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *