বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর শেখ হাসিনার বিদায় ঘটে ২০২৪ সালের আগস্টে, যখন ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে তার সরকার চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে এটি রূপ নেয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, আর সরকার সেই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে শত শত প্রাণহানি ঘটায়। একপর্যায়ে জনগণের চাপ, সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মিলিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই বিদায় শুধু একজন ব্যক্তির পতন নয়, বরং এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পতন, যা জনগণের আস্থা হারিয়েছিল এবং দেশকে একের পর এক সংকটে নিমজ্জিত করেছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতি টালমাটাল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বেকারত্ব সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিভাজন জাতিকে বিভক্ত করেছে, আর নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে আস্থা ও মানবিক মূল্যবোধ ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটি সৎ, যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার হকদারের নিকট পৌঁছে দাও এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার কর, তখন ন্যায়বিচারের সাথে বিচার করো।” (সুরা আন-নিসা ৪:৫৮)। নেতৃত্ব আসলে একটি আমানত, যা সঠিক ব্যক্তির হাতে অর্পণ করা উচিত। সেই ব্যক্তির মধ্যে থাকতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা। রাসুল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই নেতা এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে তার নেতৃত্বাধীনদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ নেতৃত্ব কোনো ক্ষমতার ভোগ নয়, বরং এটি আল্লাহর কাছে জবাবদিহির একটি দায়িত্ব।
বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন এমন নেতা, যিনি আল্লাহভীরু ও দুর্নীতিমুক্ত হবেন। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন। তার মধ্যে থাকতে হবে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞা, যাতে তিনি বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির জটিলতা মোকাবিলা করতে পারেন। তিনি হবেন ঐক্যের প্রতীক, যিনি বিভক্ত জাতিকে একসূত্রে গেঁথে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারবেন। একই সঙ্গে তার নেতৃত্ব হবে সেবকসুলভ, অর্থাৎ তিনি নিজেকে শাসক নয়, জনগণের সেবক ও অভিভাবক মনে করবেন।
এখন বাংলাদেশ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই সময়ে সঠিক নেতৃত্ব উঠে এলে দেশ নতুন আশার আলোয় পথ চলতে পারবে। অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে বেশি সময় লাগবে না। জনগণেরও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে—কারণ গণতন্ত্রে নেতৃত্ব জনগণের কাছ থেকেই উঠে আসে। তাই নেতাকে বাছাই করার সময় ধর্মীয় মূল্যবোধ, সততা, যোগ্যতা এবং সেবার মানসিকতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বাংলাদেশের সামনে আজ যে সংকট, তার একমাত্র সমাধান হলো সৎ ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। কোরআন-হাদিসে যে নেতৃত্বের মূলনীতি দেওয়া হয়েছে, সেটিই হতে পারে দেশের জন্য আলোর দিশা। আমাদের প্রয়োজন এমন একজন নেতা, যিনি জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করবেন, দুর্নীতি ও অবিচার দূর করবেন এবং বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করবেন।